নব্য প্রস্তর যুগের মানবজীবনের বিভিন্ন দিক

সূচনা: পাথরের যুগের শেষ পর্যায় নতুন পাথর বা নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic Age) নামে পরিচিত। মধ্য প্রস্তর সংস্কৃতির শেষে এই পর্বে পৃথিবীর আবহাওয়া অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এই অনুকূল পরিবেশে আদিম মানবের জীবনযাত্রায় উল্লেখযােগ্য সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়। আনুমানিক খ্রি.পূ. ৮০০০-৪০০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কাল হল নতুন পাথরের যুগ।


[1] জীবিকা


  • পশুপালন: এযুগের মানুষ পশুপালনের কৌশল আয়ত্ত করে। কুকুর, ভেড়া, গােরু, গাধা, হাতি প্রভৃতি পশুকে তারা পােষ মানাতে শেখে।খাদ্যের জোগান ছাড়াও গৃহপালিত পশুকে তারা যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে।


  • কৃষির সূচনা: নব্য প্রস্তর পর্বে আবাসস্থলের পাশে বীজ বা গাছের শিকড় পুঁতে দেওয়া শুরু হয়। এভাবেই কৃষির সূচনা ঘটে।


[2] সমাজ: পূর্বেকার সমাজকাঠামাে এ যুগে আরও পরিশীলিত হয়। পরিবারগুলির কাঠামাে আরও সুসংঘবদ্ধ হয়ে ওঠে। সমাজে একক বা দলগত বিবাহরীতি চালু হয়। সমাজে বিনিময়প্রথার উদ্ভব ঘটে এবং শ্রমবণ্টন ব্যবস্থা চালু হয়।


[3] আশ্রয়স্থল: নব্য প্রস্তর যুগের শেষের দিকে মানুষ স্থায়ী আবাস নির্মাণ করতে শেখে। গাছের ডালপালা ও ঘাসপাতা দিয়ে তারা কুটির বানাতে শেখে। সুইটজারল্যান্ডের আদিম অধিবাসীরা হ্রদের মধ্যে খুঁটি পুঁতে তার ওপর মাচা বেঁধে বসবাস করত এমন নিদর্শন মিলেছে।


[4] হাতিয়ার: নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ আগের তুলনায় অনেক উন্নত মানের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে। এই পর্বের উল্লেখযােগ্য পাথরের হাতিয়ারগুলি ছিল কাটারি, নিড়ানি, ছেনি, বাটালি, কাস্তে, বর্শার ফলা, ছােরা, ছুঁচ প্রভৃতি। কুঠার, কোদাল-সহ বেশ কিছু হাতিয়ারে কাঠের হাতল লাগানাের কৌশল এসময় চালু হয়।


[5] আগুনের ব্যবহার: নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ পাথর ভাঙার মধ্য দিয়ে প্রথম আগুন জ্বালানাের কৌশল আবিষ্কার করে। আগুনের সাহায্যে তারা কাঁচা মাংস আগুনে পুড়িয়ে নিয়ে বা সেদ্ধ করে খেতে শিখল, গুহার মুখে আগুন জ্বালিয়ে বুনাে জানােয়ারদের তাড়াতে শিখল এবং শীতের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে শিখল।


[6] চাকার আবিষ্কার: নব্য প্রস্তর যুগে এক তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হল ‘চাকা’। চাকার ব্যবহারের মাধ্যমে মৃৎপাত্র উৎপাদনে পরিবর্তন আসে পাশাপাশি চাকাকে কাজে লাগিয়ে যানবাহন তৈরির ধারণা সৃষ্টি হয়।


[7] ভাষার উন্নয়ন: নব্য প্রস্তর যুগে ভাষার উন্নতি ঘটেছিল। এযুগে সমাজ কাঠামাে অনেক সংঘবদ্ধ হওয়ায় নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেশ কিছু ভাষার আত্মপ্রকাশ ঘটে।


[8] শিল্প


  • বস্ত্রবয়ন শিল্প: নব্য প্রস্তর যুগে বর্ষবয়ন শিল্পের সূচনা ঘটেছিল। শপের আঁশ থেকে তৈরি সুতাে দিয়ে এসময়ের কারিগররা লিনেন কাপড় বুনতে শেখে৷ মেসোপটেমিয়ার কারিগররা ভেড়ার লােম দিয়ে পশমি কাপড় বানাতে শেখে।


  • মৃৎশিল্প: নব্য প্রস্তর যুগে মৃৎশিল্পে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে। চাকাকে কাজে লাগিয়ে কম সময়ে অনেক বেশি সংখ্যক মাটির পাত্র তৈরি হতে থাকে। মাটির তৈরি পাত্রকে পুড়িয়ে শক্ত করার কৌশল আবিষ্কৃত হয়। পাত্রগুলির গায়ে নানা ধরনের নকশা এবং রং করার কৌশল চালু হয়।


[9] শিল্পকলা ও ধর্মবিশ্বাস: নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ পাথর কেটে দেবীমূর্তি গড়তে শিখেছিল৷ মেসােপটেমিয়ার ইউবেইদ এবং ইজিয়ান সভ্যতার ক্রীটে এই ধরনের মূর্তি মিলেছে।

Comments

Popular posts from this blog

Class X all Writing Pragraph,Report,Summary,Notice,Biography,Story,Process Writing,Diologue,Letter

অন্তবর্তী প্রস্তুতিকালীন মূল্যায়ন জীবন বিজ্ঞান কোষ বিভাজন

হীরক ও গ্রাফাইট গঠনের তুলনা করো?