বাংলার উৎসব , একটি পথের আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা Class X

 


বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা 

ভূমিকা –


উৎসব হল মানুষের অবসর মুহূর্তের আনন্দঘন প্রকাশ । বহু মানুষের একত্র সমাবেশ ঘটে এই উৎসবে । প্রাত্যহিক দিন যাপনের গ্লানি কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভোলা সম্ভব হয় উৎসবের রোশনাইয়ে । উৎসবের দিনটি আর পাঁচটি দিনের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা । আমাদের আচার - আচরণ , পোষাক - পরিচ্ছদ , সাজ - সজ্জা সমস্ত কিছুই অন্যরকম হয় এই উৎসবের দিনে ।


বাংলার জাতীয় উৎসব

বাঙালিরা যে সমস্ত জাতীয় উৎসব পালন করে তার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংহতি ও ঐক্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। বাঙালিরা যে সমস্ত জাতীয় উৎসব পালন করে সেগুলি হল যেমন স্বাধীনতা উৎসব, প্রজাতন্ত্র দিবস, গান্ধীজীর জন্ম দিবস, নেতাজির জন্ম দিবস ও বিবেকানন্দের জন্ম দিবস ইত্যাদি।


বাংলার সামাজিক উৎসব

বাঙালিরা সামাজিক উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে মিলন ও আদান প্রদানের ভূমিকাকে গড়ে তোলে। বাঙালিরা যে সমস্ত সামাজিক উৎসব পালন করে তা হল বিবাহ অন্নপ্রাশন, জন্মদিন পালন, জামাইষষ্ঠী, ভাইফোঁটা ইত্যাদি।


বাংলার ধর্মীয় উৎসব


হিন্দু বাঙালি , বাঙালি মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, শিক প্রভৃতি ধর্মালম্বী মানুষদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিভিন্ন রকমের। বাঙালি মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব গুলি হল যেমন ঈদ উল ফিতর, ঈদ উল আযহা, মহররম ইত্যাদি। বাঙালি হিন্দুরা যে সমস্ত ধর্মীয় উৎসব পালন করে তার মধ্যে হল দুর্গা পূজা, সরস্বতী পুজো, বাসন্তী পুজো, জন্মাষ্টমী, কালীপুজো, বিশ্বকর্মা পুজো, শিবের গাজন ইত্যাদি। খ্রিষ্টানরা বড়দিন ও গুড ফ্রাই ডে পালন করে বৌদ্ধরা বুদ্ধ পূর্ণিমা ও শিকদের গুরু নানকের জন্মদিন।


বাংলার লোক উৎসব

বাঙালির জীবন ধারার সঙ্গে অনেক রকমের লোক উৎসব এর প্রচলন আছে। বাঙালিরা অজ্ঞান মাসে ধান উঠার সময় নবান্ন উৎসব খুব আনন্দের সহিত পালন করে। এছাড়া বাঙালিরা যে সমস্ত লোক উৎসব পালন করে সেগুলি হল ভাদু, টুসু ইত্যাদি।


উপসংহার

এখন বাঙালীদের মধ্যে সেই উৎসবের আর পারস্পারিক কল্যাণ কামনা নেই আর তেমন আনন্দও নেয়। এখন কে কত দামের পোশাক করল ও অলংকার বলল তার জাহির করার প্রবণতা প্রকট তাই উৎসবে গুরুত্ব এখন খুব কম হয়ে গেছে তার সাথে সাথে উৎসবের আনন্দ খুব কম হয়ে গেছে বাঙালীদের কাছে।


                 একটি পথের আত্মকথা

ভূমিকা : “পথ কি তার নিজের শেষকে জানে, যেখানে লুপ্ত ফুল আর স্তব্দ গান পৌঁছাল, যেখানে তারার আলােয় অনির্বাণ বেদনার দেওয়ালি-উৎসব।”—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ভাষ্য যেন আমার সার্থক আত্মপরিচয়। সেই কবে সূচনার কথা; আজও আমার ক্ষীণ মনে পড়ে, তবে এ কথা সত্যি আমার শেষ ঠিকানা কোথায় তা আমিও জানি না! বহু যুগ আগে ঘন জঙ্গলের বুক চিরে মানুষ আমাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। গাছগাছালির ফাকে ফাকে এই ক্রমাগত চলাতেই তাে আমার আনন্দ। এভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়াই তাে জীবন। ধুলাে-মাটি দিয়ে তৈরি আমার শরীরে কত কাল ধরে কত কিছুর প্রলেপ পড়ল। ক্রমে শক্ত-জমাট হয়ে উঠলাম আমি। তবু থামতে পারলাম কোথায়! আমার থামা বারণ, কারণ ২ আমি যে রাজপথ, পথিক মানুষের চিরসখা।


আত্মকথা : আমি গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রােড। আমার বিস্তৃতি ডানকুনি থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস পর্যন্ত। আমি ভারতের প্রধান জাতীয় সড়কগুলির মধ্যে একটি। আমার দু-পাশে কত গাছপালা, কলকারখানা, বাড়ি। দিনরাত অশান্ত, অস্থির মানুষ ও তার যানবাহন আমার বুকের ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে। এক একজনের এক-একরকম ছন্দ। তাদের গতিময় ছন্দের স্রোতের ভিন্ন ভিন্ন দোলা আমার প্রাণে তােলে শিহরণ। চরৈবেতি চরৈবেতি এই তাে আমাদের মন্ত্র। তবে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বেদনায় স্নান অসহায় মানুষের পায়ের শব্দে আমি অনুভব করেছি নৈরাশ্যের কম্পন। আবার তৃপ্ত মানুষের হাঁটায় সয়েছি দম্ভ ও আত্মবিশ্বাসের অনুরণন। আর দূর থেকে আসা মানুষজন যখন পায়ে পায়ে হাঁটে, তখন তাদের রােমাঞ্চ-কৌতুহল-উদ্দীপনা যেন প্রতিটি পদসঞ্চারের তালে ফুটে ওঠে। তবে ক্লান্ত পথিক অনেক পথ চলে যখন আমার প্রান্তে কোনাে নদীর সামনে ক্ষণকালের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে, তখন কৌতুক ও আনন্দে আমারও থামতে ইচ্ছে হয়।


অনুভুতি : মানবজীবনের মতাে আমার জীবনেও যেন তিনটি অধ্যায়-শৈশব, যৌবন ও পরিণতির কাল। আমার শৈশব হল রাজপথের পত্তনের কাল, তখন লােকজন ছিল কম, গাছপালা ছিল বেশি। তখন গাড়িঘােড়ার সংখ্যা হাতে গােনা যেত। তাই দিনে-রাতে কোনাে মানুষের পদশব্দ শুনলেই আমার শিরায় শিরায় উত্তেজনার শিহরণ অনুভূত হত। মানুষের পায়ের শব্দের অপেক্ষায় আমি অধীর হয়ে থাকতাম। তারপর দিন গেল বদলে। গাড়িঘােড়া বাড়ল, লােকজন বাড়ল, রক্তপাতে, বেদনায় কেঁপে উঠলাম আমি। প্রতিবাদ জানিয়েছি, কিন্তু কে শােনে সে কথা!


উপসংহার : আজ আমি সংকীর্ণ, জরাজীর্ণ। আমার আজ অনেক বয়স। আমার অনেক জায়গায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আছে। সরকার থেকে মেরামতির প্রচেষ্টা চালানাে হচ্ছে। তবে এখনও আমার সংস্কারে তারা হাত লাগায়নি। শুনেছি আমার উপর দিয়ে একটি নতুন ওভারব্রিজ স্থাপন করা হবে। আমার জৌলুষ আজ আর নেই। আমি মৃতপ্রায় অসাড়ের মতাে কোনােরকমে টিকে আছি। এখন আমার একটাই সান্ত্বনা আমি মানুষকে ঘরের সন্ধান দিই। ধুলাে-ধোয়া-কোলাহল থেকে ঘরের স্বস্তি ও স্তব্ধতায় মানুষকে নিয়ে যাই। মানুষের বেদনা ও ভালােবাসার সঙ্গে আমার ভলােবাসা ও যন্ত্রণাও আবর্তিত হয়। এই বােধটুকুই আমি মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত করতে চাই।


              Chatrasathi Sikshakendra







Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

অন্তবর্তী প্রস্তুতিকালীন মূল্যায়ন জীবন বিজ্ঞান কোষ বিভাজন

শ্রীগোপীনাথ জিউ মন্দির, অগ্রদ্বীপ, পূর্ব বর্ধমান

জৈবনিক প্রক্রিয়া নবম শ্রেণী