রচনা - ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদঃ

    ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদঃ



নানা জাতি, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।” – রবীন্দ্রনাথ


ভূমিকা – নানা জাতি গােষ্ঠীর সমন্বিত দেশ আমাদের ভারতবর্ষ। সুদূর প্রাচীন কাল থেকে ভারত দেহে লীন হয়েছে বহু জাতির মানুষ – এদের ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্নতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ভাষাগত, ব্যবহারগত, জীবনচর্যাগত ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য – তবুও বিবিধের মাঝে মিলন চিন্তাই সংহতি ও ঐক্যের সাধনারই ফল।


দেশপ্রেমের আদর্শ – ভারতের মাটিতে আছে দেশপ্রেমের আদর্শ। এখানে জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ অপেক্ষা গরীয়সী। মা মাটি মানুষ একাকার হয়ে আছে এখানে। এই দেশের জন্য সব ত্যাগ করা যায় আর এই দেশপ্রেমের আদর্শই দেশের সার্বিক কল্যাণের পথ।


জাতীয়তার আদর্শ – অখণ্ড দেশ ও জাতীয় চেতনা থেকেই জাতীয়তার আদর্শ ও ঐক্যভাবনা। এই জাতীয়তাবােধ থেকেই জাতীয় সংহতি, যার মূল মন্ত্র – ‘এক জাতি, এক প্রাণ, একতা’ । ইংরেজ শাসনকালের বহুপূর্বে আমাদের জাতীয় সংহতি অক্ষুন্ন ছিল, তার প্রমাণ খণ্ড ছিন্ন ভারতভূমিকে একসূত্রে গ্রথিত করা এবং মৈত্রী ভাবনায় জাতীয় সত্যের আলােকে দেশকে ভালােবাসা।


জাতীয় সংহতির অন্তরায় – জাতীয়তাবােধ থেকেই জাতীয় সংহতির জন্ম। জাতীয় জীবনে সংহতিবােধ না থাকলে দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রবল হয়ে উঠে দেশকে নানা বিপর্যয়ের সম্মুখীন করে।

বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িকতা – বহু মানুষের আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমের থেকে যে জাতীয়তাবােধের জন্ম হয়েছিল তা আজ চন্দ্রের কলঙ্কের মতােই বর্তমান ভারতবর্ষে দেখা দিচ্ছে সংহতির নেতিমূলক মানসিকতা তথা বিচ্ছিন্নতার চিন্তা। ভারত স্বাধীন হল ঠিকই কিন্তু পাকিস্তান বিভাজন প্রথম বিচ্ছিন্নতা ও সাম্প্রদায়িকতার দরজা উন্মােচন করল যার ফল আমরা এখনও ভােগ করছি। এছাড়া রয়েছে সময় এগিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিকতার সমস্যা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, ভাষাগত ভেদপ্রবণতা। বহু জায়গায় দেখা দিয়েছে সংকীর্ণ প্রাদেশিকতা, যেমন – আসামে ‘বিদেশী খেদা আন্দোলন। সংস্কৃতিগত পার্থক্যও বহু অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন বিভেদকামী শক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন আন্দোলনে সামিল হয়েছে যেমন পাঞ্জাবে খালিস্তানী আন্দোলন, গাের্খাল্যান্ডের জন্য আন্দোলন, মাওবাদী আন্দোলন, আরও নানান উগ্রপন্থী আন্দোলন এর প্রমাণ।


বিদেশী শক্তির মদত – এশিয়া মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ও বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতকে দুর্বল করার জন্য, অশান্তির আগুন জিইয়ে রাখার জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি তৎপর। পাকিস্তানের গােয়েন্দা সংস্থা আই.এস.আই. সমরিক প্রশিক্ষণ, অত্যাধুনিক অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য দিয়ে চলেছে, তাই কাশ্মীরী জঙ্গী ও অন্যান্য উগ্রপন্থীরা এ.কে.৫৬ রাইফেল, রকেট ও গ্রেনেডের মতাে অস্ত্র নিয়ে ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্থান ও অন্যান্য দেশ থেকে ভাড়াটে সৈন্যরা এসে জঙ্গী সংগ্রামে হাত মিলিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গী গােষ্ঠী মায়নামার, বাংলাদেশ প্রভৃতি সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রে নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে। এইভাবে কিছু বিদেশী চক্রান্তকারীদের সহযােগিতায় কিছু বিচ্ছিন্নতাকামী মানুষ দেশকে জঙ্গীগােষ্ঠীর কাছে ছেড়ে দিচ্ছে; এরা জাতীয়তাবােধের অর্থ না বুঝে সংকীর্ণ জাতীয় চেতনায় প্রমত্ত হয়ে উঠেছে। আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে এর প্রতিরােধ করতেই হবে।

ভারতীয় সংবিধানের স্বরূপ ও সংহতির উপায় – ভারতের সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। সব রাজ্যগুলি নিজ নিজ ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে সেগুলির সমন্বয়ের জন্য এই যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার একান্ত অনুকূল জাতীয় সংহতির আদর্শ এবং সংবিধানের মূল কাঠামােতে এই আদর্শকে রূপদানের কথা বিশেষভাবে বলা আছে। ভৌগােলিক সীমার মধ্যে যতই অসুবিধা থাক না কেন, জাতীয় সংহতিকে বাস্তবায়িত করা কোনমতে সম্ভব নয় এ ভাবনা আনাও অন্যায়।


উপসংহার – আজ জাতির সামনে বড়াে পরীক্ষা জাতীয় সংহতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ। ভারত আমার মা – আর সেই মা কে অক্ষত রেখে দেশকে সমৃদ্ধতর করাই জাতীয় সংহতির আদর্শ। দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিচ্ছিন্নতাবােধ, সাম্প্রদায়িক চেতনা ও স্বার্থচিন্তা দূর করে আমরা মিলিত হতে যেন পারি ‘এক জাতি, এক প্রাণ, একতা’ নামক জাতীয় সংহতির জাতীয় চেতনার পতাকাতলে। আর এই সংহতিবােধের জন্য চাই আবেগাত্মক আদর্শের সঙ্গে ব্যবহারিক বিচারবুদ্ধির অতন্দ্র দূরদর্শিতার সঠিক সাযুজ্য। তাইতাে –

তােমার দেওয়া এ বিপুল পৃথিবী সকলে করিব ভােগ,

এই পৃথিবীর নাড়ী সাথে আছে সৃজন-দিনের যােগ।

            পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার




Comments

Popular posts from this blog

অন্তবর্তী প্রস্তুতিকালীন মূল্যায়ন জীবন বিজ্ঞান কোষ বিভাজন

শ্রীগোপীনাথ জিউ মন্দির, অগ্রদ্বীপ, পূর্ব বর্ধমান

জৈবনিক প্রক্রিয়া নবম শ্রেণী