মধ্যপ্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ?

 

মধ্যপ্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? Class eleven History Important Question

প্রশ্ন – মধ্যপ্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ?

উঃ- মধ্যপ্রস্তর যুগ- ১) প্রেক্ষাপট- প্লেইস্টোসিন যুগের শেষদিকে চতুর্থ অর্থাৎ সর্বশেষ বরফের যুগের অবসানের পর ভূপ্রকৃতিতে বড়ো ধরনের পরিবর্তন আসে।

এসময় বরফের আস্তরণ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠে জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।

ইউরোপের তুন্দ্রা অঞ্চল বনভূমিতে ছেয়ে যায়।

নিকট প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিস্তীর্ণ মাঠঘাটগুলি মরুভূমিতে পরিণত হয়।

নতুন এই আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পেরে এ যুগে বেশ কিছু প্রাণী ও কিছু কিছু মানব প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে।

বেঁচে থাকা মানব প্রজাতিগুলি এই সময় নতুন সংস্কৃতির জন্ম দেয়।

২) সময়কাল – খাদ্যসংগ্রহকারী প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং খাদ্য-উৎপাদনকারী নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কাল মধ্য প্রস্তর যুগ নামে চিহ্নিত হয়।

এ যুগের সময়সীমা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম।

তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, খ্রিষ্টপূর্ব ১৫,০০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০,০০০ অব্দ পর্যন্ত মধ্য প্রস্তর যুগ বিস্তৃত ছিল।

৩) হাতিয়ার – এ যুগের মানুষ হাতিয়ার তৈরিতে আরও দক্ষতার পরিচয় দেয়।

এ যুগের হাতিয়ারগুলি পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে উন্নত ও আকারে ক্ষুদ্র হয়।

পাথর ছাড়াও জীবজন্তুর হাড়, দাঁত প্রভৃতি দিয়ে হাতিয়ার তৈরি এসময় আরও উন্নত হয়।

এ যুগের মানুষের প্রধান অস্ত্র ছিল তিরধনুক, হারপুন, বড়শি প্রভৃতি।

হাতিয়ারের ক্ষুদ্র আকারের জন্য এই যুগকে ক্ষুদ্র প্রস্তর যুগ নামেও অভিহিত করা হয়।

৪) জীবিকা – মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল পশুশিকার ও ফলমূল সংগ্রহ।

বড়ো পশু শিকারের পাশাপাশি তারা লাল হরিণ, বনবিড়াল, নেউল প্রভৃতি পশুও শিকার করত।

যারা নদী ও সমুদ্রের উপকূলে বসবাস করত তারা সেখান থেকে মাছ ও শামুক সংগ্রহ করত।

তারা এ যুগে কোনো কোনো পশুকে পোষ মানাতেও শিখেছিল।

এ যুগের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালী ছিল আর্ধযাযাবর প্রকৃতির।

৫) যানবাহন – বরফের ওপর দিয়ে চলার জন্য মধ্য প্রস্তর যুগের আদিম মানুষ স্লেজগাড়ির ব্যবহারও জানত।

এই গাড়ি টানার কাজে তারা কুকুরকে কাজে লাগাত।

তারা জলপথে যাতায়াতের উদ্দেশ্যে গাছের গুঁড়ি খোদাই করে নৌকা বানাত।

৬) চিত্রকলা – মধ্য প্রস্তর যুগে মানুষ চিত্রকলায় কিছুটা অগ্রগতি ঘটিয়েছিল।

নিত্যদিনের ব্যবহার্য সামগ্রী এবং বিভিন্ন হাতিয়ার ছিল এ যুগের চিত্রকলার বিষয়বস্তু।

জ্যামিতিক আকারের ত্রিকোণ, চতুষ্কোণ, বৃত্তাকার চিত্র এসময় আঁকা হত।

আবার মানুষ এবং পশুর চিত্রও পাওয়া গেছে সুইডেন, ফিনল্যান্ড, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন প্রাচীণ গুহায়।

৭) অস্তিত্বের নিদর্শন – উত্তর ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে এবং ভারতের পাঞ্চাব, রাজস্থান ও গুজরাটের বিভিন্ন স্থানে মধ্য প্রস্তর যুগের বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যায়।

Comments

Popular posts from this blog

অন্তবর্তী প্রস্তুতিকালীন মূল্যায়ন জীবন বিজ্ঞান কোষ বিভাজন

শ্রীগোপীনাথ জিউ মন্দির, অগ্রদ্বীপ, পূর্ব বর্ধমান

জৈবনিক প্রক্রিয়া নবম শ্রেণী