দশম শ্রেণীর ভূগোল মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক এর সমস্ত প্রশ্ন এবং উত্তর
আজকে আমরা আলোচনা করব দশম শ্রেণীর ভূগোল মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক এর সমস্ত প্রশ্ন এবং উত্তর নিয়ে
দশম শ্রেণীর ভূগোল মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক এর সমস্ত প্রশ্ন এবং উত্তর পার্ট 1

নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১. চিত্রসহ নদীর সঞ্জয়কার্যের ফলে গড়ে ওঠা দুটি ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।
উত্তর :- 1) প্লাবনভূমি (Flood Plain)
নদীর সমভূমি প্রবাহে পলি সঞ্চয়ের ফলে নদী উপত্যকা চওড়া হয়। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে নদীতে অতিরিক্ত পরিমাণ জল এলে নদীর দু'কুল ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এবং বন্যার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে বন্যার জল কমে গেলে নদীর কূলে ছড়িয়ে পড়া জলের সঙ্গে বাহিত পলি সঞ্চয়ের ফলে যে নতুন ভূমি গড়ে ওঠে তাকে প্লাবনভূমি বলে।

বৈশিষ্ট্য :- (1) পলি দ্বারা গঠিত হয় প্লাবনভূমি সর্বদা উর্বর প্রকৃতির হয়ে থাকে। (2) প্লাবনভূমিতে স্বাভাবিক বাঁধ গড়ে ওঠে।অনেক সময় এই বাঁধগুলি যােগাযােগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়। (3) প্লাবনভূমি গুলি উর্বর প্রকৃতির হওয়ার জন্য কৃষি কাজের অনুকুল। (4) অনেক সময় প্লাবনভূমি গুলির পশ্চাতে যে জলাভূমি গুলি দেখা যায় সেগুলিতে মাছ পাওয়া যায়।
উদাহরণ: ভারতের গঙ্গা নদীতে,ব্রহ্মপুত্র নদে,মিশরের নীল নদীতে প্লাবনভূমি গড়ে উঠেছে।
2) বদ্বীপ Delta): - নদীর গতিপথের শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ নিম্ন প্রবাহ যেখানে নদী সমুদ্রে মিলিত হয়
এরকম মােহনা অঞ্চলে নদীবাহিত সুক্ষ সুক্ষ পলি সঞ্চিত হয়ে যে ত্রিকোণাকার মাত্রাহীন 'ব' বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টার ন্যায় দেখতে ভূমিরূপ গড়ে তােলে তাকে বদ্বীপ বলে।
বৈশিষ্ট্য:
(1) বদ্বীপ মূলত ত্রিকোণাকার হয়ে থাকে।
(2) এটি দেখতে মাত্রাহীন ব' বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টার মতাে হয়।
(3) বদ্বীপ নদীর নিয় প্রবাহ তথা মােহনা অঞ্চলে গড়ে ওঠে।
(4) এটি মূলত নদীবাহিত পলি দ্বারা গঠিত।
প্রকারভেদ: -
অবস্থান, আকৃতি ও গঠনের উপর ভিত্তি করে বদ্বীপকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: (1) ধনুকাকৃতি ব-দ্বীপ নীলনদ,মহানদী গোদাবরী নদী ব দ্বীপ। (2) কাসপেড বদ্বীপ(ভারতের সুবর্ণরেখা নদীর বদ্বীপ, ইতালির তাইবার নদীর বদ্বীপ ইত্যাদি (3) পাখির পায়ের ন্যায় আকৃতির বদ্বীপ (আমেরিকার মিসিসিপি নদীর বদ্বীপ, ভারতের কুষ্ণা নদীর বদ্বীপ,সিন্ধু নদীর বদ্বীপ ইত্যাদি)।
২. মরু সম্প্রসারণ রােধের তিনটি উপায় উল্লেখ করাে।
উত্তর :- (1) বৃক্ষ সীমান্ত গড়ে তোলা।
মরুভূমি সংলগ্ন অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে কাটা গাছ ঝোপঝাড় ও বৃক্ষ রোপন করে মরুভূমির সম্প্রসারণ রােধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বৃক্ষ গুলি সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো হয়, যাতে বায়ু তাড়িত বালুকণা বৃক্ষে প্রতিহত হয়ে মরুভূমির প্রসার রােধ করতে পারে। এই সারিবদ্ধ বৃক্ষ গুলিকে
বৃক্ষ সীমান্ত tree line boundary) বলা হয়।
উদা: সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাংশে 11 টি দেশ 15 কিলোমিটার চওড়া এবং ৪ হাজার কিলােমিটার বৃক্ষ সীমন্ত গড়ে তুলেছে।
(2) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করা; মরুভূমি সংলগ্ন অঞ্চলে পশুচারণ করলে সবুজ গাছপালা এবং বৃক্ষের । ধ্বংসের সম্ভাবনা থাকে যা মরু সম্প্রসারকে অনেক অংশে বাড়িয়ে তোলে । তাই মরু সম্প্রসারণ করার জন্য মরুভূমি সংলগ্ন অঞ্চলে কঠোরভাবে পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করার দরকার ।
(3) সেচন কার্যের ভূমিকা
সেচ কার্যের মাধ্যমে মরুভূমি শুকনাে বালি কে যদি ভিজিয়ে রাখা যায় তাহলে বায়ু তাড়িত হয়ে সেই ভারী ভেজা বালি অন্যত্র উঠে যেতে পারে না, ফলে মরুভূমির প্রসার ও ঘটে না।
৩. ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করাে।
উত্তর :
পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি | পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি |
---|---|
এটি ভারতের পূর্ব প্রান্তে বঙ্গোপসাগর উপকূল বরাবর অবস্থিত | এটি ভারতের পশ্চিম প্রান্তে আরব সাগর উপকূলীয় বরাবর অবস্থিত |
পূর্ব উপকূলের সমভূমির দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনায় কম । দৈর্ঘ্য ১৫০০ কিমি । | পশ্চিম উপকূলের সমভূমির দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা পূর্ব উপকূলের সমভূমির তুলনায় বেশি । দৈর্ঘ্য ১৬০০ কিমি । |
পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি প্রশস্ত ও সমতল প্রকৃতির । এটি প্রায় ১০০ কিমি চওড়া । | পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি সংকৃণ উঁচু নিচু ও বন্ধুর প্রকৃতির । এটি প্রায় ৮০ কিমি চওড়া । |
৪. অতিরিক্ত ভৌমজল উত্তোলনের প্রভাবগুলি বর্ণনা করাে।
উত্তর :- (1) পানীয় জলের অভাব
অতিরিক্ত পরিমাণ ভৌম জলের উত্তোলনের ফলে ভৌমজলপীঠ (Ground water table) নিচে নেমে যায়।তাই পরবর্তীকালে কূপ বা নলকূপ খনন করলে সহজেই আর জল পাওয়া যায় না। একদা পানীয় জলের অভাব দেখা দেয়।
(2) ভূমিধস: অতিরিক্ত ভৌমজল উত্তোলনের ফলে মাটির নিচের স্তরগুলি স্বাভাবিক তুলনায় অনেক বেশি শুকনাে হয়ে যায়। ফলে মাটির নিচের স্তরগুলির মধ্যে ভারসাম্য হারিয়ে যায়। এক কথায় যা ভূমিধসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
(3) মাটিতে খনিজ লবণের আধিক্য
ভূগর্ভ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ভৌমজল উত্তোলনের ফলে ভৌম জলের সঙ্গে মাটির নিচের খনিজ লবণ উঠে আসে। এই খনিজ লবণ ভৌমজলের সঙ্গে কৃষি জমি উপরিভাগে ছড়িয়ে পড়ে। বছরের পর বছর এই প্রক্রিয়া ঘটতে থাকায় মৃত্তিকার উপরিভাগে খনিজ লবণের আধিক্য ঘটে। একসময় সেই উর্বর জমি লবণের আধিক্যের জন্য অনুর্বর জমিতে পরিণত হয়। বর্তমানে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার অধিকাংশ কৃষি জমি এই সমস্যায় জর্জারিত।
দশম শ্রেণীর ভূগোল মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক এর সমস্ত প্রশ্ন এবং উত্তর পার্ট 2

নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর লেখাে :
১. মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় কেন ?
উত্তর :- মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্যের কারণ-
(i) বায়ুপ্রবাহ:- মরু অঞ্চলে বায়ু অবাধে তার বাহিত পদার্থকে অনেক দূরে টেনে নিয়ে যায়।
(ii) উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ুর উপস্থিতি:- মরু অঞ্চলে বায়ুর আর্দ্রতা কম থাকার ফলে সেটি অত্যন্ত উষ্ণ হয়ে ওঠে। এতে ওপরের স্তরের বালুরাশি শুঙ্ক ও হালকা হয়ে বহুদূরে উড়ে যায়।
(iii) ঝড়ো বাতাসের প্রাধান্য:- ঝােড়াে বাতাসের জোর বেশি। এতে বাতাসে বাহিত বালুকনার আঘাতে যেমন শিলার ক্ষয় হয় তেমনি ক্ষয়িত পদার্থ বহুদূরে উড়ে ভূমিরূপ গঠন করে।
(iv) উদ্ভিদ শূন্যতা:- বালুকণা মাটিতে আটকে রাখতে পর্যাপ্ত সংখ্যক উদ্ভিদের অভাব থাকায় মরু অঞ্চলে বায়ু খুব সহজে ও দ্রুত কাজ করে।
(v) শুষ্ক-রুক্ষ জমি ও জলাভান্ডার:- শুষ্ক - উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য ওপরের মাটির স্তর শুষ্ক ও রুক্ষ থাকায় মাটি ভঙ্গুর ও আলগা হয় এবং প্রবল বাতাসের আঘাতে তা গুঁড়াে হতে থাকে।
২. কীভাবে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন সুন্দরবনকে প্রভাবিত করছে ?
উত্তর :- বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন কিভাবে সুন্দরবনকে প্রভাবিত করেছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো ।
(i) বিশ্ব উষ্ণায়ন :- বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ হিমবাহ গলনের ফলে বঙ্গোপসাগরের জলতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এর জন্য সুন্দরবনের ছোট ছোট দীপগুলি সমুদ্রগর্ভে নিন্মছিত হয়েছে । এছাড়া ঘোড়ামারা ও নিউমুর সহ আরও দশটি দিয়ে নিন্মছিত হওয়াই আশঙ্কা রয়েছে।
(ii) সাইক্লোন জোয়ার ও বান :- প্রবল সাইক্লোন মুখ্য ও গৌণ জোয়ার এবং নদীতে বান আসার ফলে দ্বীপগুলির বারবার প্লাবিত হচ্ছে । এর ফলে প্লাবিত অঞ্চল গুলিতে সমুদ্রের জল ঢুকে পড়ায় মাটিকে লবণাক্ত করে দিয়ে কৃষি বাণিজ্যের অনুপযোগী করে তুলেছি এমন কি প্রচুর কৃষিজমি বাঁশ গাছ নারকেল গাছ ও বসতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে ।
(iii) এল নিনো :- এল নিনো প্রভাবে সমুদ্র জলের উন্নয়ন হেরফের হওয়ায় জলজ প্রাণী গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
৩. বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা কী ?
উত্তর :- বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা গুলি হলো :-
(i) ভৌম জলের মাত্রা বৃদ্ধি ভূগর্ভের জল জলতলের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা হয়
(ii) বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও পরিশোধন করে পানীয় জল পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।
(iii) মরুভূমি গুলিতে কৃষিকাজের জন্য এবং গবাদি পশুর পানীয় জল হিসেবে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা হয় ।
(iv) কিছু কিছু শিল্প ক্ষেত্রে সংরক্ষিত বৃষ্টির জল ব্যবহার করা হয় ।
৪. এল নিনো ও লা নিনা কীভাবে ভারতের মৌসুমী বায়ুকে প্রভাবিত করে ?
উত্তর :-
এল নিনোর প্রভাব :- এল নিনো হলো পেক উপকূল বরাবর প্রবাহিত একটি দক্ষিণমুখী অস্থির উষ্ণ সমুদ্র স্রোত এই এল নিনোর প্রস্তাবে দক্ষিণ এশিয়ার জেট বায়ু দুর্বল হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করে ফলে এল নিনো বছর গুলোতে মৌসুমী বায়ু ভারতে দেরিতে প্রবেশ করে এবং ক্ষরা সৃষ্টি হয়।
লা নিনার প্রভাব :- এটি একটি উত্তরমুখী অতি শীতল স্রোত । এর প্রভাবে ভারত মহাসাগর প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প পূর্ণ উষ্ণ আদ্র মৌসুমী বায়ু ভারতে প্রবেশ করে তাই লা নিনার বছর গুলোতে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় ।
Comments
Post a Comment