মনোযোগ বলতে কী বোঝো ? শিক্ষাক্ষেত্রে মনোযোগের ভূমিকার মূল্যায়ন করো ।
- মনোযোগ বলতে কী বোঝো ? শিক্ষাক্ষেত্রে মনোযোগের ভূমিকার মূল্যায়ন করো ।
অথবা , মনোযোগ কাকে বলে ? শিক্ষায় মনোযোগের ভূমিকা লেখো ।
Ans: মনোযোগ : শিখন প্রক্রিয়ার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মনোযোগ । বিভিন্ন মনোবিদ নিজস্ব ভঙ্গিতে মনোযোগের সংজ্ঞা দিয়েছেন । রস বলেছেন , এমন একটি প্রক্রিয়া যেটি চিন্তার বিষয়কে স্পষ্টভাবে মনের সম্মুখে এনে দেয় , তাকেই বলে মনোযোগ । ম্যাকডুগালের মতে , মনের যে সক্রিয়তা জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তা – ই মনোযোগ । উডওয়ার্থ – এর ভাষায় পাশাপাশি অবস্থিত অসংখ্য উদ্দীপকের মধ্য থেকে কোনো একটিকে বেছে নেওয়ার পদ্ধতিই মনোযোগ । এককথায় , যে কোনো বিষয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান অর্জনের জন্য মনকে নিবেশিত করার দৈহিক ও মানসিক প্রক্রিয়াকে বলা হয় মনোযোগ ।
শিক্ষায় মনোযোগের ভূমিকা : শিক্ষার সঙ্গে মনোযোগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে । শিখন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা জরুরি । মনোযোগ আকর্ষণের এই কৌশলগুলি নিম্নরূপ :
- মনোযোগ আকর্ষী কৌশল : জীবনবিকাশের নানা স্তরে মনোযোগের রূপভেদ ঘটে । শৈশবে ব্যক্তিনিরপেক্ষ মনোযোগের প্রাধান্য থাকে বলে তখন বস্তুর বৈশিষ্ট্য মনোযোগ নির্ধারণ করে । শৈশবে শিশু খেলাধুলার প্রতি স্বত : স্ফুর্তভাবে মনোযোগী হয় । তাই এইসময়ে শিশুর পাঠক্রম হবে খেলাভিত্তিক । ফলে তার মনোযোগ বাড়বে পাঠক্রমে ।
- ইচ্ছাসাপেক্ষ কৌশল : শৈশব পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায় ইচ্ছাসাপেক্ষ মনোযোগ । এইসময় শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে শিখনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করা , উপদেশ প্রদান , লঘু শাসন ইত্যাদির প্রয়োগ করতে হয় ।
- পরিসর অতিক্রম না করা : শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষককে খেয়াল রাখতে হবে বিষয়বস্তু যেন তাদের মনোযোগের পরিসরকে ছাপিয়ে না যায় । এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সামনে বিষয়বস্তু সহজ ও বোধগম্য করে উপস্থাপন করতে হবে ।
- নির্ধারক প্রয়োগ : তীব্রতা , স্পষ্টতা , নতুনত্ব ইত্যাদি নির্ধারক প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রয়োজনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে ।
- বিষয় – বৈচিত্র্য প্রয়োগ : মনোযোগ সদা চঞ্চল । কোমলমতি শিশুদের কোনো বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ মনোযোগী করা যায় না । ফলে শিক্ষককে একটি বিষয় ছেড়ে অন্য বিষয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনে মনোযোগী করে তুলতে হবে ।
সবশেষে , পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে মনোযোগ প্রধান শর্ত বলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের বিষয়ে শিক্ষককে সচেতন হতেই হবে ।
2. পরিনমন কাকে বলে ? শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের ভূমিকা আলোচনা করো । অথবা , পরিণমন বলতে কী বোঝো ? শিখন ও পরিণমন কীভাবে সম্পর্কিত লেখো ।
অথবা , শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক কী তা সংক্ষেপে আলোচনা করো । শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব লেখো ।
Ans: পরিণমন : পরিণমন একটি চর্চা যা অনুশীলন ও শিখন নিরপেক্ষ স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া , এটি আপনা – আপনি ব্যক্তির মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে তার অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।
শিখনও পরিণমনের সম্পর্ক :
- শিখন ও পরিণমন উভয়েই বিকাশমূলক প্রক্রিয়া । মানুষের জীবন বিকাশে উভয় প্রক্রিয়ার গুরুত্ব রয়েছে । তবুও এদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দেখা যায়।
- পরিণমন একটি স্বতঃস্ফূর্ত , স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়া সহজাত ও অভ্যন্তরীণ বলে বাহ্যিক পরিবেশ একে বিশেষ প্রভাবিত করতে পারে না।
- শিখন এক ধরনের শর্তসাপেক্ষ বিকাশমূলক মানসিক প্রক্রিয়া । শিখনের সাহায্যে শিশুরা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে ।
- শিখন ও পরিণমন উভয়েই পরস্পরের উপর নির্ভরশীল । সঠিক পরিণমন ছাড়া শিখন সম্ভব হয় না । এটি শিখনের সীমারেখা নির্ধারণ করে । কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিখনও পরিণমনকে তরান্বিত করে । ফলে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে এবং উভয়েই শিশুর বিকাশের সহায়ক ।
শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের ভূমিকা গুরুত্ব : শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব নিম্নরূপ—
- পরিশীলিত আচরণ : পরিণমনের মাধ্যমে পরিবর্তিত আচরণগুলিকে যথাযথ শিখনের দ্বারা পরিশীলিত করা যায় ।
- শিক্ষা পরিকল্পনায় পরিণমন : যথাযথ পরিণমনের অভাবে শিশু সঠিকভাবে পাঠ গ্রহণ করতে পারে না । ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিণমনের দিকে খেয়াল রেখে নানা স্তরে শিক্ষা পরিকল্পনা করতে হয় ।
- পরিণমন অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা : মানবজীবনে শৈশব ও কৈশোরে পরিণমনের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায় । তখন পরিণমন অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবসা করা জরুরি । কারণ এইসময় শিশুর জীবনে সঠিকভাবে পরিণমন খুবই প্রয়োজন ।
Comments
Post a Comment