আদিম মানুষ: শিকারী খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারী

 সূচনা: নব্য প্রস্তর যুগের আগে পর্যন্ত খাদ্য উৎপাদন করতে জানত না বলে মানুষ বিভিন্ন হাতিয়ারের সহায়তায় তারা বন্য পশু শিকার করত এবং বনের ফলমূল, পাখির ডিম, নদীর মাছ প্রভৃতি সংগ্রহ করত। অর্থাৎ প্রথম পর্যায়ে আদিম মানুষ ছিল খাদ্যসংগ্রাহক (Food-gatherer)। পুরুষ ও নারী উভয়েই খাদ্য সংগ্রহের কাজে যুক্ত থাকত।


আদিম মানুষ: শিকারী খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারী


[1] পুরুষের শিকার


  • হাতিয়ার: হােমাে, স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের আগে অনুন্নত মানুষ পাথর ও লাঠির বেশি কোনাে হাতিয়ারের ব্যবহার জানত না। পরবর্তীকালে মানুষ পাথরের বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার তৈরি করতে শেখে। যুগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাতিয়ারগুলিও উন্নত হতে থাকে।


  • পশুশিকার


    • শিকারে অংশগ্রহণ: এসময় পুরুষরা শিকারের কাজে অংশ নিত। তারা পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার বা অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে পশু শিকার করত এবং শিকার করা পশুর মাংস সংগ্রহ করত।


    • দলবদ্ধতা: এযুগের মানুষ একাকী শিকারে না গিয়ে দলবদ্ধভাবে শিকারে বের হত। এভাবে প্রাচীন কালে শিকারি মানুষদের নিয়ে গড়ে ওঠা দল বা সংগঠনটিকে ক্ল্যান' (Clan) নামে অভিহিত করা হয়। রক্তের সম্পর্ক আছে এমন মানুষদের নিয়ে মূলত ক্ল্যান গঠিত হত।


    • গােষ্ঠীর ভূমিকা: প্রতিটি মানবগােষ্ঠীই নির্দিষ্ট এলাকায় শিকার করত। সেখানে অন্য গােষ্ঠীর শিকারের অধিকার থাকত না। খুব বড়াে শিকার ধরার উদ্দেশ্যে কখনাে কখনাে কয়েকটি ক্ল্যান ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেত। এরূপ সমবায়ের অন্তর্ভুক্ত সমাজকে বলা হত ট্রাইব' (Tribe)।


  • মাংস বণ্টন: শিকার করে পাওয়া পশুর মাংস তারা সকলের মধ্যে ভাগ করে নিত। প্রথমদিকে তারা আগুনের ব্যবহার জানত না বলে কাঁচা মাংস খেত। পরবর্তীকালে আগুনের ব্যবহার শিখে তারা মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস করে।


[2] নারীর খাদ্য সংগ্রহ: পরিবারের নারীরা নিকটবর্তী বনজঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, শাকসবজি, পাখির ডিম প্রভৃতি সংগ্রহ করত। তারা পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার তৈরি করত এবং সন্তানের যত্নাদি করত। খাদ্য রাখার প্রয়ােজনীয় মৃৎপাত্রগুলিও মেয়েরাই তৈরি করত। এভাবে খাদ্য সংগ্রহকে কেন্দ্র করে সুদূর অতীতে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে শ্রমবিভাজন গড়ে উঠেছিল।


[3] আদিম মানুষের সংস্কৃতি: প্রাগৈতিহাসিক যুগে দীর্ঘকাল‌ ধরে শিকারি আদিম মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। শিকারি ও খাদ্যসংগ্রাহক আদিম মানুষের সংস্কৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল-


  • লােম ও হাড় সংগ্রহ: আদিম মানুষ পশুর মাংস বা দুধ ছাড়াও পশুর লােম, চামড়া ও হাড় সংগ্রহ করত। চামড়া ও লােম দিয়ে তারা পরিধেয় বস্ত্র, শীতবস্ত্র এবং পশুর হাড় ও শিং দিয়ে তারা বিভিন্ন হাতিয়ার তৈরি করল।


  • বাসগৃহ নির্মাণ: নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ গােষ্ঠীবদ্ধভাবে নদী বা জলাশয়ের ধারে বাসগৃহ নির্মাণ করতে শুরু করে। তাদের তৈরি বাসগৃহগুলি ছিল তিন ধরনের, যথা—স্থল বসতি, হ্রদ বসতি, গুহা বসতি।


    • স্থল বসতি: মাটির ওপর কৃষিজমির ধারে তৈরি হত স্থলবসতি। বড়াে বড়াে পাথরের চাই দিয়ে তৈরি হত ঘরের দেয়ালগুলি| পাথর ছাড়া মাটি, কাঠ, পাথর, বাঁশ, চামড়া প্রভৃতি উপকরণকে কাজে লাগিয়ে স্থলবসতিগ্লুলি নির্মিত হত।


    • হ্রদ বসতি: হ্রদের জলের মধ্যে এই ধরনের ঘর তৈরি করা হত। সুইটজারল্যান্ডের নিউচ্যাটেল হ্রদে এই ধরনের বসতি নির্মিত হয়েছিল বলে জানা গেছে।


    • গুহা বসতি: আদিমকাল থেকেই মানুষ ছিল গুহাবাসী। তাই নতুন পাথরের যুগে এসে মানুষ গুহায় বাস করার অভ্যাস একেবারে ত্যাগ করতে পারেনি।


  • স্থায়ী বসতির মানােন্নয়ন: নতুন, পাথরের যুগের মানুষের যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি জীবনে প্রবেশ এই পর্বে আরও উন্নত রূপ লাভ করে। সময় এগােনাের সঙ্গে সঙ্গে বসতির সংখ্যা বেড়ে ছােটো ছােটো গ্রাম গড়ে উঠতে শুরু করে। এ যুগের শেষের দিকে রােদে শােকানাে ইট দিয়ে বাড়ি তৈরি শুরু হয়।

Comments

Popular posts from this blog

অন্তবর্তী প্রস্তুতিকালীন মূল্যায়ন জীবন বিজ্ঞান কোষ বিভাজন

শ্রীগোপীনাথ জিউ মন্দির, অগ্রদ্বীপ, পূর্ব বর্ধমান

জৈবনিক প্রক্রিয়া নবম শ্রেণী